এক.
লিমন,ফয়সাল আর প্রিন্স।তিনবন্ধু মিলে গ্র্যজুয়েশন সেকেন্ড ইয়ার পরীক্ষার পর বেড়াতে যাওয়ার চিনত্দা করল।বেশিরভাগ মানুষ কোলাহলপূর্ণ-জাঁকজমকপূর্ণ অঞ্চলে বেড়াতে যায়,তাই ওরা ঠিক করল নিরালা,জনবসতি প্রায় নেই, এরকম কোথাও কিছুদিন বেড়াবে।বহু ভাবনাচিনত্দা করে পাহাড়ী অঞ্চলে বেড়ানোর সিদ্ধানত্দ নিল।
ঢাকার বাইরে ওদের কোন এলাকা পরিচিত নয়।তবু ঠিক করল ,যে কোন জাগার বাসস্ট্যান্ডের আশেপাশে খোঁজ করলেই হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস-রেস্টহাউস যে কোনটাই পাওয়া যাবে। অথবা ঢাকা থেকে ট্রেনে করেও যাওয়া যেতে পারে.....।যাই হোক,বাসায় কোনভাবে ম্যানেজ করে ওরা বাসে করেই বেড়াতে গেল।
রাতের বেলা ঢাকা থেকে বাসে উঠল,পরদিন দুপুরে গনত্দব্যে পেঁৗছালো।
দুই.
বাসস্ট্যান্ড থেকে খানিকটা দূরে,ঘন বন জঙ্গলের ভিতর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কাউকে উদ্দেশ্য না করেই লিমন বলল,
'কি রে? কোন ঘরবাড়ি তো দেখিনা,খালি তো জঙ্গল!মানুষজন কি এই দিকে চলাচল করে না? একটু পর সন্ধ্যা হইলে থাকুম কৈ?'
'ঐ দেখ চায়ের দোকান,চল্ দোকানদারকে জিগেশ করি',ফয়সাল বলল।
"চাচা,আমরা ঢাকা থেকে এসছি,কিছুদিন বেড়াবো,এই এলাকায় থাকার মত কোন ভাল জায়গা কি আছে?"
"আমার দোকান থেকে প্রায় ৪৫ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ,এই দিকে একটাই রাসত্দা,বরাবর হাঁটতে থাকলেই পাবেন।
রাসত্দার শেষে একটা কাঠের দোতালা বাড়ী আছে,লোকজন এদিকে বেড়াতে এলে ঐ বাড়ীতেই ওঠে।"
বৃদ্ধ দোকানদারের আঞ্চলিক ভাষা বুঝতে ওদের কিছুটা কষ্ট হলো।
গুরিগুরি বৃষ্টি,সন্ধ্যা হয়ে এসছে।তাড়াতাড়ি চা-সিগারেট খেয়ে ওরা বাড়ির দিকে হাঁটতে লাগল।
বাড়ির কর্তা বৃদ্ধলোকটি সাদরে অতিথি গ্রহন করলেন।
সারাদিনের ক্লানত্দিতে নাওয়া-খাওয়া না করেই ওরা ঘুমিয়ে পড়ল।
তিন.
রেগুলার ব্যায়াম আর মর্নিংওয়াকের অভ্যাসবশত: পরদিন বেশ ভোড়েই ফয়সালের ঘুম ভাঙল।
সকাল ১০টার দিকে প্রাত:ভ্রমন সেরে ঘরে এসে দেখল, লিমন তখনও ঘুমাচ্ছে আর প্রিন্স ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে আছে।
'কী রে! টেবিলে নাসত্দা সাজিয়ে রেখে ধ্যানে বসেছিস কেনো? নাসত্দা পেয়েছিস কোথায়?'
'একটু আগে গৃহকর্ত্রীই তোর জন্য দিয়ে গেল রে....!'
দোতালার জানালা দিয়ে উদাসভাবে বাইরে তাকিয়ে কিছুটা টিটকারীর সুরে বলল প্রিন্স।
' আহারে! তাই নাকি!আমার জন্য তো গৃহকর্ত্রীর তাহলে অনেক মায়া!কাল তো কথাই বলতে পারিনি,ঘুমিয়ে পড়েছি,যাই...!আজ তাকে একটু শুভেচ্ছা জানিয়ে আসি...!'
'আরে দাঁড়া!ঐ দেখ,এই নিরালায় হালকা কুয়াশায়,মায়াবী অশরীরীর মত কুয়া থেকে পানি তুলছে তোর মায়াবী গৃহকত্রর্ী!কিন্তু....,পাহাড়ী মেয়ে...!ভেজা তার তনু মন,তোকে ধরা দেবে না!'
'মানে...?'দরজার দিকে পা বাড়াতে গিয়েও খোলা জানালা দিয়ে ফিরে তাকালো ফয়সাল।বিমোহিত হলো।
ওর কাছে অপরূপা দৃশ্য।মুগ্ধ নয়নে পানি উত্তোলন দেখছে, দেখছে অঙ্গনা অপ্সরীর প্রাত:স্নান।
তন্ময় হয়ে দেখছে,আর সাথে কল্পনার জাল বুনছে ফয়সাল।বয়সটা কেমন হবে?মোটামুটি ২০/২১ বছর।অত্যনত্দ ফর্সা,স্বা্#৭১৩;হ্যবতী,প্রায় সাড়ে পাঁচফুট লম্বা।বড়সড় পানপাতা আকৃতির মুখ।গায়ে লম্বা পাতলা গামছা জড়ানো।বাঁশঝাড়ের কিছুটা আড়ালে কুয়ার পাড়ে দাঁড়িয়ে গোসল করছে।
এদিকে ফয়সালের হাবভাবে প্রিন্স মিটিমিটি হাসতে লাগল।হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেল দু'জনে,লিমনের কন্ঠ শুনে।
'কী রে? হাঁ করে দাঁড়িয়ে কি দেখছিশ?জীবনে দেখিশনি?নাসত্দা খা,আমিও হাত মুখ ধুয়ে এসে খেয়ে নেই,তারপর জায়গাটায় ঘুরতে বের হব।'
কিছুক্ষণ পর নাসত্দা সেরে লিমন গেল পাশের ঘরে।ঐ মেয়ে আর তার বাবা সেখানে খাওয়া-দাওয়া করেন। কিছুক্ষণ তাদের সাথে সময় কাটিয়ে প্রিন্সকে নিয়ে বাইরে বের হল।ফয়সাল বলল,সকালে প্রাত:ভ্রমণ করে এসছে,এখন ঘরেই থাকবে,বিশ্রাম নিবে।
লিমনরা বের হতেই রান্নাঘরে এসে বেশ মোলায়েমভাবে-হাসি হাসি মুখে,মেয়ের সাথে 'ও কথা বলার চেষ্টা করল।
'কি করছ...!তুমি পড়ালিখা কর না...!তোমাদের আশেপাশে তোমাদের কোন প্রতিবেশী নেই...?'
'ওহ্ আপনি!আপনার বন্ধুরাতো মনে হয় বাইরে গেল দেখলাম,আপনি গেলেন না?'চুলায় রান্না করতে করতে উত্তরের পরিবর্তে হাসিমুখে মেয়েটা বলল।
'নাহ্, আমিতো সকালেই গিয়েছি।তো...তোমার বাবা কোথায়?ওনাকে তো কোথাও দেখছি না...!'
'মসজিদ আমাদের এখান থেকে অনেক দূরে,তাই বাবা ১২টার দিকেই জোহর পড়তে চলে যায়,৩টা সাড়ে ৩টার দিকে আসবে।'
এই কাংক্ষিত মুহুর্তেরই অপেক্ষায় ছিল ফয়সাল,সেই সকাল থেকে।তাই বুকটায় কেমন যেন শিহরণ বয়ে গেল।শরীর হালকা হালকা কাঁপতে লাগল।'এখানে.... প্রকৃতির সানি্নধ্যে এসে মনে হচ্ছে আমি আমার পূর্ণতাকে পেলাম!এতদিন কি যেন পাইনি!কী যেন আমার নেই..... কেমন যেন এক শূণ্যতা ছিল আমার মাঝে,আমি বুঝতে পারিনি!জানো...!সমসত্দ প্রকৃতির সানি্নধ্য মনে হচ্ছে যেন এখানে!কেমন যেন একটা শানত্দি পাচ্ছি এখানে এসে.....!ওফ্!"কাঁপা কাঁপা কন্ঠে, ভারী নি:শ্বাসের সাথে,চেহারাটা অসহায় করে তুলে,নিত্য নতুন যাযাবর কামনার সমাচার শুরু করল ফয়সাল।
ওদিকে তরকারি কাটতে গিয়ে মৃদু 'আহ্'করে উঠল ফয়সালের 'নতুন মানবী'। ছদ্মবেশী প্রেমের কথার মুগ্ধতায় বাসত্দবতাই ভুলতে বসেছে সে।ছুঁড়ি দিয়ে নিজের হাতটাই কেটে ফেলল অন্যমনষ্কভাবে ফয়সালের দিকে তাকাতে গিয়ে।
সাথে সাথে প্রায় লাফিয়ে কাছে এলো ফয়সাল।
'কী ব্যাপার...!হায় হায়...! হাত কেটে গিয়েছে!'কৃত্রিম অ্ি#৭১৩;হরতা ফুটিয়ে তুলল অভিব্যক্তিতে ।'দেখি! দেখি!আহারে কত রক্ত!স্যাভলন ক্রিমটা কৈ?একটা ন্যাকড়া দাও,ক্ষত্#৭১৩;হান বেঁধে দেই!' আরও কত চাপাবাজি.....।
মনে মনে এইতো চাইছিল সে,কোন একটা ডাইভার্শন,কোন একটা ছুতা,মেয়েটাকে স্পর্শ করার।
নিজের রুমাল ছিঁড়ে ক্ষত্#৭১৩;হান বেঁধে দিল। মেয়েটার মাথায় হাত রেখে বলল,'কী ব্যাপার...!মাথা ঘুরছে...!'কন্ঠটাকে কেমন যেন বিচলিত করে তুলল;'থাক্ থাক্,কাঁদেনা!ব্যথা ভাল হয়ে যাবে!' তার 'পার্টটাইম-প্রেয়সীর' মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে সোহাগী কন্ঠে বলল সে।
এমনিভাবে খালি বাড়ির নির্জনতায় প্রতিদিনই তিন চার ঘন্টা করে সময় পেয়েছিল এরপর থেকে ওরা।মেয়ের বাবা প্রায় সারাদিন বিভিন্ন কাজে বাইরে থাকত,লিমন আর প্রিন্স যেত বেড়াতে।
চার.
প্রায় দু' মাস ওরা ঐ অঞ্চল বেড়ালো।কখনও রাতে ঘন জঙ্গলেই ক্যাম্পিং করত।
যেখানেই বেড়াতে যাক,ফয়সালের কামনা থাকত তার নব মানবীর প্রতি,যেভাবেই হোক দেখা করত প্রতিদিন।
সম্পর্ক গাঢ় নয়,প্রগাঢ় হল।
প্রায় দ'ুমাস বেড়ানোর পর লিমন আর প্রিন্স তৈরী হল বাড়ির উদ্দেশ্যে।মোটামুটি শীতকালের ঠান্ডা হাওয়া তখন বইতে শুরু করেছে।ফুরফুরে আড্ডাবাজীর মেজাজে আছে সবাই।
'....এখনই যাবি...?আরও দুই-চার দিন থাকলে হয়না....?'
"ও...!তোমার মাছের কান্না শুরু হয়েছে.....?তাইতো বলি.....আমরা ওয়েটিং করি তোমার জন্যে ক্যাম্পিং-এ,আর তুমি রাতের আঁধারে-বনে-বাদারে ঘুরে বেড়াচ্ছো কোথায়...?ঠিক আছে,আর দুইটা দিন থাকি,কিন্তু বাসায় ফিরতে হইবো তাড়াতাড়ি,আব্বা আম্মা আর না হাইলে টেনশন করবো।"ফয়সালের মিনতি শুনে লিমন বলল মুচকি হেসে।
'লিমন চল্ না...এই দুই দিন ঐ বাড়িতে একটু ফিনিশিং বেড়ানটা বেড়ায় আসি...!'পুন:কাতরতায় বলল ফয়সাল।
'তুই তো ব্যাটা ওর লগে ডেলিই দ্যাহা করছ.....আবার যায়া থাকতে হইবো!?আইচ্ছা চল্,কিন্তু দুই দিনের বেশি আর পারুম না।'
'আইচ্ছা'।
পাঁচ.
যেন বহুদিন পর দু'জন, পরস্পরকে দেখল।
বুকে মাথা পেতে রেখে, পিঠে দু'হাত জড়িয়ে ধরল ফয়সালের রূপসী,কাঁধে মাথা রাখল ফয়সাল,ভারী নি:শ্বাসের সাথে মিষ্টি গন্ধ পেল।একহাতে রূপসীর কোমড় পেঁচিয়ে ধরে এগিয়ে চলল বেডরুমের দিকে।
যখনই সুখের আচ্ছাদনের অবগাহনে নিজেকে জড়াতো ফয়সাল,তার সুখ চাহিদার যোগান দেয়ার জন্যে,যোগান দাত্রীকে আশ্বসত্দ করত, ছদ্মবেশী রোম্যান্টিক ভাবমূর্তিতে বলত,'জান্!আমি তোমাকে অনে_ক ভালবাসি,আমাকে বিয়ে করো!আমার বাবার চারটি বাড়ি আছে,সবগুলোই তো আমার হবে!আমাদের ভবিষ্যৎ অনেক অনেক সুন্দর থাকবে!'
প্রেমের আতিশয্যের ব্যকূলতায় প্রেমাষ্পদ যখনই বাহুডোরে আবদ্ধ হতো;ব্যস!অমনি-প্রয়োজন শেষ!বিগত কয়েক বছরের এই প্র্যকটিস আজও অবলিলায় চালিয়ে গেল সে।প্রেমাত্মার লেবাসে কামাত্মার অবলেপন!-এবং এখনেই শেষ!
ছয়.
রাত ১০টা।
হালকা গুরিগুরি বৃষ্টি। পিচ্ছিল পাহাড়ি পথ,ঘুটঘুটে অন্ধকার।সমসত্দ পথ লিমনের নোকিয়া এগারশো মোবাইলের টর্চের আলোতে ওরা পথ চলছে।প্রকৃতির শীতলতার সাথে ফয়সালের মনের অজানা ভয়ের শীতল স্রোতধারাও যেন একত্র হয়ে মিশেছিল। কেউ কোন কথা বলছে না।বাসস্ট্যান্ডে এসে লিমন-ফয়সাল বাসের একসিটে,প্রিন্স অন্যসিটে উঠে বসল।
'লিমন,আমার তো আরও কয়েকদিন বেড়ানোর ইচ্ছা ছিল।কিন্তু অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পরীক্ষা দিয়ে এই সময়েই বিশাল বিপদে পড়ছি',বাস ছাড়ার পর এতক্ষণে মুখ খুলল ফয়সাল,'কি যে করুম,খুব দিশাহারা লাগতাছে!'
"হ!বুচছি!যা করার.... তা কইরাই ফালাইছস!কিন্তু এখন তো আমরা চইলাই যাইতাছি আর অসুবিধা কি? জীবনেও কি আমরা আর এই জায়গায় আসুম?"
"যতটা সাধারণ ভাবতাসস তা-না,যখন নিজের ফ্যামিলি নিয়া ফুটানি করছি,বাড়ায়া-বুড়ায়া বহুত কিছু তো কইছিই লগে যা সত্য তা-ও কইছি,কোন্ কোন্ মার্কেটে আমাগো জুয়েলারী দোকান আছে,এককারে সবই কইছি,মোটকথা আমার এ্যাড্রেস সহজেই বাইর করতে পারব ওরা"চাপা ক্ষোভ নিয়ে বলে চলেছে ফয়সাল,"দ্যাখ...ওর শরীর একটু খারাপ ছিল...আমাকে প্রথমে বাধা দিছিল,কিনত্দু আমি ভাবছি সিচুয়েশনটা....."
"বাহ্,প্রেমের নামে শয়তানিও করবি,আবার সদা সত্যও বলবি!আমার তো মনে হয় এইবারে জায়গা মত পড়ছস...।"
"মানে....?"
"মেয়ের বাবা রাত ভইরা জিকির করে,ওই যে.... পাশের আরেকটা ঘরে,রাইতের বেলা ...দেখছ নাই..?এইসব অঞ্চলে আমি শুনছি ক্যারামতি জানা লোকজন থাকে,যদি বান্টান্ মাইরা দেয়?"
"আরে ধূর্!আমার বাপে বিদেশ থাকে,উন্নত বিশ্বে কি এইগুলি আছে?আর যদি তা-ই হয়,তাহাইলে প্রথম দিনই তো হ্যার হেইডা বুঝনের কথা....!ব্যাটা বাসত্দব চিনত্দা কর্!"
"প্রথম দিকে হয়তো তুই ভালই আছিলি...,প্রেমই করতে চাইছিলি, এল লেইগা কিছু কয় নাই!পরে, কাম সাইরা ফালাইছস! অহনে আর বিয়া করতে চাস না....,যাই হোক....তাইলে তুই কথাটা আন্টিরে খুইলা বল,আন্টিই একটা ভাল সমাধান হয়তো দিতে পারব.....।"
"ব্যাটা ছাগল! আমি কৈ কী, আর আমার সারিন্দা বাজায় কী?আন্টিরে কমু আমি এই কাম কইরা আইছি?আন্টিরে কইলে জীবনেও সম্পত্তিগুলি আমারে দিব?মাইনষেরে দিয়া দিব।আর ঐ মেয়ের লগে আমার বিয়াও তো দিব না;ওর কে আছে? পাহাড়ী অঞ্চলের মাইয়া,আমাগো ফ্যামিলির ধারে কাছেও তো নাই,ঐ মাইয়া হাজার ভাল হইলেও তো ওর লগে আমার বিয়া দিব না....দেহি চিনত্দা ভাবনা কইরা....কী করা যায়?"
কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার বলতে লাগল ফয়সাল,"বহুৎ চাপাচাপি করছে মাইয়া,যাতে ওরে বিয়া কইরাই বাসায় নিয়া যাই!আমারে কইলো,ওর সামনেই মোবাইলে আম্মার সাথে কথা কইতে।আমি তো কিছুক্ষণ পরে বাধ্য হোএয়া আমার এক বান্ধুবীরেই আম্মা বানায়া ফোন দিয়া বুঝায়া কইলাম শর্টকাটে,যাতে মেয়েরে একটু একদিন দুইদিন ঠান্ডা রাখে,আর আমিও এই ফাকে বিয়ার লেইগা রেডি হমু!পরে ঐ মাইয়াই আমার বান্ধুবীরে আমা্মা মনে কইরা মোবাইলে কথা কইলো।কয় যে,হ্যার মা নাই,বাপ আছে,আর বলে কেউ নাই!এহন যাতে আমি তারে বিয়া কইরা,তার আব্বারে বইলা, তারে আমার লগে কইরা বাসায় নিয়া যাই! তা না হইলে হ্যা-ই বলে ঢাকায় রওনা দিব!কেমন একটা ফ্যরে পড়লাম...!"
ফয়সালের কথা শুনে লিমনও খানিকটা চিনত্দিত হয়ে পড়ল।ওর সাথে যোগ না দিলেও,ওর সাথে তো আসছে।যদিও ফয়সালের আম্মা অনেক বড় চাকরী করে,ওদের টাকাপয়সাও আছে,তার পরেও....'আর ভাবতে চাইল না বিষয়টা।
সাত.
এর দু'দিন পর।
কাউকে কিছু না বলে ফয়সাল একাই ঐ অঞ্চলে গেল,এবং সেদিনই ফিরে আসল।
হাসাহাসি করে গল্প করতে করতে তার রূপসীকে নিয়ে সেই কুয়ার পাড়ে গেল এবং ধাক্কা মেরে ফেলে দিল।
সময় বুঝে গিয়েছিল, যখন মেয়ের বাবা বাসায় থাকেনা।অন্যকোনভাবে হত্যা করলে যদি ধরা পড়ে যায় ,তাই স্বাভাবিকতা রাখতে চাইল।'কুয়ার ধারে কোনভাবে হয়তো পিছলা খেয়ে পড়ে গেছে'এরকম ঘটনা ঘটিয়ে,ঐ চাচার দোকানেও দেখা না দিয়ে,জঙ্গলের ভিতর দিয়ে ভিতর দিয়ে,বাসস্ট্যান্ডে এসে ঢাকার বাস ধরলো।
আট.
মাসখানেক কেউ জানল না।
"লিমন,একটু দেখা কর্,খেলার মাঠে", ফয়সালের মোবাইল কল পেয়ে 'ও গেল দেখা করতে।
"লিমন,যে বিষয়ের প্রতি ছিলাম অবিশ্বাসী,আজ সেই অবিশ্বাসই আমাকে করেছে অসু্#৭১৩;হ,যে আনন্দ-ফূর্তি করতাম,সেটা আমার প্রতি নি:শ্বাসের অশানত্দি!" লিমনকে দেখার সাথে সাথেই কাছে ডেকে নিয়ে ফয়সাল বলতে লাগল।
"তুই এইসব কী কইতাসস ফয়সাল....?"
"দ্যাখ্.....প্রকৃতির মধ্যে কত গুপ্ত স্পর্শকাতরতা আছে,আমি বিশ্বাস করতাম না,আমার ফ্যামিলির কেউই এসব বিশ্বাস করেনা,আমরা এসব শুনলেই হেসে উড়িয় দিয়ে বলতাম 'হ্যালুসুনেশন'!কিন্তু বিশ্বাস কর্,প্রত্যেকটা রাতে ঘুমানোর সময় ঐ মেয়েকে আমার খাটের নীচে শুয়ে থাকতে দেখি,মনে হয় যেন খাটের নীচ থেকে কেউ ধাক্কা মারতেছে।ঘরের দরজা খোলা রাখলে দরজার সামনে দাঁড়ায় থাকতে দেখি,বাথরুমে যাওয়ার জন্য দরজা খুললেই দেখি 'ও দাঁড়ায় আছে।আর ঘুমায় পড়লে ঘুমের মধ্যে ওকে স্বপ্নে দেখি।আরও কত মেয়ের সাথে তো আমি এইরকম করছি,কিন্তু এই অবসহাতো হয় নাই।প্রথম দিন এই ঘটনা ঘটার পর আমি চীৎকার দিয়ে উঠছি,পাশের ঘর থেকে আম্মা দৌড়ায় আসছে,মনে করছে আমি দু:স্বপ্ন দেখছি।কিনত্দু আমি তো জানি, আমি ওকে খুন করছি!ওর সাথে আরেকজনও তো খুন হয়ে গেছে!"
কেমন যেন উদভ্রানত্দের মত একনাগারে বলে চলেছে ফয়সাল। কোনদিকে তাকিয়ে যে কথা বলছে,মোহাবিষ্টের মত ওর দিকে তাকিয়ে থেকেও বুঝতে পারছে না লিমন।
'আমার আম্মা বড় বড় ডাক্তার দেখায়ও চিকিৎসা করাইতে পারে নাই,আব্বাও বিদেশ থেকে কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসবে,'বলে চলেছে ফয়সাল।'প্রথম রাতে ওকে দেখার পর ,পরের দিন আম্মা অফিসে চলে গেছে,আমি বাসায় একা।কোন কাজের লোকও নাই।হঠাৎ দেখি 'ও আমার বিছানার পাশে বসে আছে।চিৎকার দিয়ে বললাম 'আমাকে মাফ করে দাও...তুমি যাও! আমি তোমাকে ভয় পাই!"তখন কুয়ায় পড়ার সময় 'ও যে চীৎকারটা দিয়েছিল সেই চীৎকার দিয়ে বলল "যতদিন পৃথিবীতে থাকবি এভাবেই বেঁচে থাকবি,কাউকে কিছুই বলতে পারবি না,সহ্যও করতে পারবি না।জীবন্মৃত হয়ে থাকবি,খোদার অভিশাপ তোকে পেতেই হবে,এই দুনিয়াতেই প্রতিদান পাবি,আর পালায় যাবি কোথায়?মৃতু্যর পর এখানেই আসবি!"
কানতে কানতে ফয়সাল বলল,"লিমন, এই জিনিষ জেগে থাকলে দেখি,ঘুমালেও দেখি,এই ঘটনা কাউকে বলতে পারিনি।আমার আম্মা সাইক্রিয়াট্রিস্ট দেখিয়েছে,তখন বলতে চেয়েছি,কিন্তু তখন কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছি,মুখ দিয়ে আওয়াজও বের করতে পারিনি।"
"যখন ওকে স্বপ্নে দেখি,তার পরের দিন সারাদিনই বিছানায় শুয়ে থাকতে হয়,একেবারে প্যারালাইসেস মত হয়ে যায়।হাত-পা-শরীর কিছুই নাড়াতে পারি না,খিদা লাগে,পানির পিপাসা লাগে, আমি নড়তেই পারিনা,বাথরুমে যাব,বাথরুমও বিছানায় হয়ে যায়। অথচ একাধিক হসপিটালে থরো-চেকাপ করানোর পরও, ডাক্তার সবগুলি রিপোর্ট স্বাভাবিক দেখালো।
'ও স্বপ্নে বলে,জেগে থাকলেও বলে,ওকে আমি যা করেছি আমার জীবনেও নাকি এরকম হবে।রাত্রে আম্মা অফিস থেকে বাসায় এসে ঐ বিছানা পরিষ্কার করে,তখন আমি একদম স্বাভাবিক হই।বাসায় কোন কাজের লোকও আর নাই।আম্মা এখন আর কিছু বলেনা,কেমন যেন চুপ হয়ে গেছে,কেমনভাবে জানি আমার দিকে তাকায়।"এক নি:শ্বাসে কথাগুলো বলে কানতে লাগল ফয়সাল।
ওদিকে লিমন ওর ছোটবেলার বন্ধুর অব্#৭১৩;হা দেখে ভয়ও যেমন পেয়েছে, অবাকও হলো।বডিবিল্ডার-কারাতে জানা, ধূর্ত প্রকৃতির ছেলে,এই অব্#৭১৩;হা হয় কিভাবে?বন্ধুর দিকে আর সরাসরি তাকাতে পারল না লিমন।কেমন যেন অতৃপ্ত আত্মার অশরীরী মনে হল ওর কাছে।উদাসভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে অভয় দেয়ার জন্য বলল,"ফয়সাল, আমার মনে হয় তুই শুধু শুধুই ভয় পাচ্ছিস,এটা তোর অবচেতন মনের প্রভাবে মনো-দৈহিক সমস্যা।তা না হলে এই রকম ঘটনা কী আর ঘটেনা?পেপারে দেখছ নাই?তাইলে তো যারা তোর মত কাম করে,তাগো সবারই এই অব্#৭১৩;হা হইতো।তুই....."
কথা বলতে বলতে হঠাৎ পাশ ফিরে দেখে কোন ফাঁকে যেন ফয়সাল চলে গেছে অনেক দূর পর্যনত্দ,পিছন ফিরে আর বন্ধুকে ডাকল না সে।
নয়.
এর একদিন পর।
প্রিন্সকে ফোন করে,কোন ঘটনা না বলে, লিমন ঘটনা্#৭১৩;হলে গেল।
বাস থেকে নেমেই প্রিন্সকে বলল,"প্রিন্স,ঐ বাসায় যাব।যতক্ষণ যাব-আসব,সম্পূর্ণ রাসত্দা তুই সিগারেট খেতে থাকবি,যদি না-ও খাশ,কমপক্ষে হাতে নিয়ে একটার পর একটা জ্বালাবি!" লিমন আবার ভেবেছিল, মনে হয় জ্বীন-ভূতের আছর,জ্বীন-ভূত আবার নাকি আগুন ভয় পায়,তাই এই ব্যব্#৭১৩;হা! অবশ্য প্রিন্সকে এটা বলল না।
'চল্,একটু সামনে দাড়াই,চাচায় আইলে কিছু কথা বইলা তারপর যাব।'
রাত সাড়ে নয়টা।ঐ চাচার দোকান তখনও খোলা।অবশ্য দোকানদার চাচাকে কোথাও দেখল না।
'আমার কেমন জানি ভয় করতাছে লিমন...!'আরষ্টভাবে বলল প্রিন্স,হঠাৎ পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে, দোকানদার চাচা দোকানে বসে আছে। ভয় পেয়ে কোন কথা না বলে হাতে ইশারা করল লিমনের।লিমনও কিছুটা ভয় পেল।ওদের সামনে দিয়ে কখন কিভাবে এল লোকটা?
"তোমরা আবার আসছ?এখান থেকে চলে যাও",আগের মত আঞ্চলিক টানে নয়,স্বাভাবিকভাবেই বলল।কেমন যেন অন্যরকম লাগল কন্ঠটা।
"চাচা,আমার আসছি ঐ বাড়ির মুরুব্বীর সাথে একটু দেখা করতে,আমাদেরকে ছয় প্যাকেট সিগারেট দেন।"
"মরা বাড়িতে যাচ্ছ,সিগারেট খেতে খেতে যাবা?ঠিক আছে,আসার সময় খেও।"
সিগারেট নিয়ে কিছুটা সামনে হেঁটে লিমন বলল,'প্রিন্স নে,সিগারেট জ্বালা।'কথা শুনে আর কাজ দেখে প্রচন্ড ভয় পেল প্রিন্স, লিমনের মৃদু ধমকে সচকিত হল।
'প্রিন্স,সিগারেট জ্বালায় হাতে রাখো,আর নিভলে একটার পর একটা ধরাও,আমরা দূর থেকে ঐ বাড়ীর অব্#৭১৩;হাটা দেখব।'
সর ু রাসত্দা।পাশাপাশি দু'জনের বেশী হাঁটা যায়না।দুইধারে জঙ্গল-কাঁটা আর বাঁশঝাড়।প্রচন্ড অন্ধকারে লিমনের মোবাইলের টর্চে দু'জন হাঁটতে লাগল।
ঐ বাড়ীর প্রায় দেড়শ-দু'শ গজ দূরে থাকতেই টর্চ নিভিয়ে বাঁশঝাড়ের আড়ালে দু'জন লুকাল। থেকে থেকেই মেঘের আড়ালে চাঁদ মুখ লুকাচ্ছে।
ওরা দূর থেকে দেখতে পেল উঠানে একটা মাত্র লাইট জ্বলছে।মেয়ের বাবার সাথে আরেক লোক দাঁড়িয়ে আছে।
মেয়ের বাবা এমনিতেই বেশ লম্বা,ঐ লোক তার চেয়েও লম্বা।ওদের মনে হল দশ ফুট।অবিশ্বাস্য!অন্ধকারের আলোছায়ায় দেখতে পেল ধবধবে ঊজ্জ্বল সাদা জোব্বা পড়নে।মনে হল একহাত লম্বা সাদা দাঁড়ি,বাতাসে উড়ছে।ঘাড় পর্যনত্দ লম্বা সাদা চুল।অদ্ভুত এই লোককে এই পরিবেশে দেখে প্রচন্ড ভয়ে, প্রচন্ড জোরে ওদের বুক কাঁপতে লাগল। ওরা দেখতে পাচ্ছে, লোকটা ওদের দিকে ফিরে দাঁড়ানো, আর মেয়ের বাবা ওদের দিকে পিঠ ফিরিয়ে ঐ লোকটার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলছে।
বেশ দূর থেকে হলেও স্পষ্ট শুনা যাচ্ছে তাদের কথা।
"আমার মেয়েকে যে ছেলে এই কষ্ট দিছে,আমি আমার জীবনের সাধনা দিয়ে ঐ ছেলের জন্য তার প্রতিদান চাই!ঐ ছেলেকে আজীবন এই অন্যায়ের শাসত্দি ভোগ করতেই হবে,এর শাসত্দি পাইতেই হবে,এর শাসত্দি পাইতেই হবে......,আমি এই দুনিয়াদারীর কাছে ঐ ছেলের জন্য কোন শাসত্দি চাইনা,সত্য-প্রায়শ্চিত্ত চাই!এই শাসত্দি পাইতেই হবে.... এই শাসত্দি পাইতেই হবে....!আমার তো আর কেউ থাকল না....!"
ওদের মনে হল,দূর পাহাড়ের গায়ে প্রতিধ্বনি হয়ে বারবার ফিরে এল যেন কথাগুলো।
কোন বাতাস নেই। আকাশের দিকে তাকালো লিমন।পরিপূর্ণ চাঁদের আলো হলুদ-মলান দেখাচ্ছে।এরকম মাঝেমাঝে দেখা যায়,ভাবল সে।দূর থেকে একাধিক কুকুরের কান্নার আওয়াজ পেল।
হঠাৎ দেখে লম্বা লোকটা হেঁটে আসতে শুরু করেছে।ওরা ভাবল,ওরা অন্ধকারে বাঁশঝাড়ে লুকিয়েছে, মনে হয় দেখবে না!চলাচলের রাসত্দা ঐদিকে ঐ একটাই। ওদের কাছাকাছি আসতেই মুহুর্তখানেক দাঁড়িয়ে কথা বলে উঠল লোকটা।
"তোমাদের মধ্যে যে ছেলে এই কাজ করছে ,তাকে এই শাসত্দি ভোগ করতেই হবে।এইটাই বিধাতার বিধান।ঐ ছেলের জীবনেও একই ঘটনা ঘটবে।তোমরা এক্ষনি এখান থেকে চলে যাও, এক্ষনি যাও!"হঠাৎ গর্জে উঠল কন্ঠটা।"মেয়ের বাবা যদি এই অঞ্চলে তোমাদের একটা আঁচড়ও দেখে,তোমাদের জীবনেও এই অভিশাপের ছায়া আসবে।"কথাগুলো বলেই লোকটা হাঁটতে শুরু করল।
হঠাৎ করে মেয়ের বাবার দিকে প্রিন্স ঐ মুহুর্তে তাকিয়ে দেখে,মেয়ের বাবা সরাসরি ওদের দিকে ফিরে দাঁড়িয়েছে।
এই অন্ধকারে লুকানো অব্#৭১৩;হায়,এই পরিবেশে মারাত্মক ভয় পেয়ে,দিগ্বিদিক জ্ঞানশূণ্য হয়ে ঊর্দ্ধশ্বাসে দৌড়ানো শুরু করল,লিমনকেও আর ডাক দেয়ার কথা বলতে পারল না।ওর দৌড় দেখে লিমনও মেয়ের বাবার দিকে তাকালো এবং সাথে সাথে কোনমতে ম্যাচ জ্বালিয়ে দুই হাতে দুই সিগারেট ধরিয়ে প্রিন্সের পিছন পিছন দেঁৗড়াতে লাগল।
দশ.
পথে কেউই কোথাও থামল না। এই অন্ধকারে, অদৃশ্যের ভয়ে কিভাবে যে প্রিন্স দেঁৗড় আরম্ভ করল আর প্রায় চাচার দোকানের সামনে এসে থামল,বিষয়টা কিছুতেই লিমনের মাথায় ঢুকল না।
''প্রিন্স, কি রে? কেমনে দৌড়াইলি?আর তুই তো আমার কয়েক সেকেন্ড আগে দৌড় দিছস,ঐ লোকরে কোথাও দেখছস?রাসত্দা তো এইখানে এই একটাই,ঐ চাচার দোকান পর্যনত্দ...."
"আবার মেয়ের বাপেও তো বহুৎ জোরে হাঁটা শুরু করছিল আমার দিকে,এর আগে তো তারে এত জোরে হাটতে দেহি নাই.....মনে হইল ঊইড়া আইতাছে....!
"খাইছে!তাইলেতো লিমন,আমাগো পিছে পিছে চইলা আইবো...!এক্ষণি ভাই!আর দেরি করিছ না.....,চল্ পালাই। কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলল প্রিন্স।
"আর একটু! আর একটু! ঐ যে চাচার দোকান এখনও খোলা রাখছে,একটু দেখা কইরা যাই....।"কৌতুহলী লিমন প্রায় জোর করে টেনে নিয়ে চলল প্রিন্সকে।
ওদেরকে দেখেই খেঁকিয়ে উঠল দোকানদার চাচা।'তোমরা এক্ষণি যাও! এক্ষণি যাও!এই অঞ্চলে তোমাদের ছায়াও ফেলবা না!'যে বৃদ্ধ চাচাকে ধীরে ধীরে হাসিমুখে কথা বলতে দেখেছিল,কিছুক্ষণ আগেও প্রায় স্বাভাবিক ছিল,তার হঠাৎ ভড়াট কন্ঠের বিকট ধমকানীতে দু'জনে হতভম্ব হয়ে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে একদৌড়ে এবার চলে এলো বাসস্ট্যান্ড।কিভাবে যেন সময়টাও দৌড়ে চলে গেল,তখন বাজে রাত আড়াইটা।
এগার.
বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখল ঢাকায় আসার একটা বাসও নাই।ভোড় সাড়ে পাঁচটায় নাকি পাওয়া যাবে।ওখানে তখন হেডলাইট জ্বালানো অন্য একটা বাস দাঁড়ানো ছিল।ওরা যে রাসত্দা ধরে এসছে সেই লম্বা রাসত্দা বহুদূর পর্যনত্দ দেখা যাচ্ছিল।ওরা বারবার সেদিকে তাকাচ্ছিল।কাউকে দেখল না।
"লিমন....,কাউরে তো দেখিনা ভাই!মেয়ের বাপ,না হইলে ঐ লোক,যারেই দেখছ,পালাবি!'প্রচন্ড ভয়ে কাঁপনি ধরে গেছে প্রিন্সের।
মারাত্মক ভয় লিমনও পাচ্ছে,প্রিন্সকে বুঝতে দিচ্ছে না।কোন কথা না বলে বাসস্ট্যান্ডের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে থাকল।
পাঁচটার দিকে ঢাকার বাস এল,সাথে সাথে দু'জনে দৌড়ে বাসে উঠল।ওদের মনে হল এতক্ষণ ওদের জানে পানি ছিলনা।
হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল প্রিন্স,'লিমন,ঐ দ্যাখ....!মেয়ের আব্বা!আমাগো দিকে তাকায় আছে!এতক্ষণ দেহি নাই,অহন সিটে বসার লগে লগে চইলা আইছে!চোখ দেহি হলুদ!বাপরে...!
'হ!আমি দেখতাছি!'দ্রুত নি:শ্বাস পড়তে লাগল দুজনের।
মেয়ের বাবা ওদের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।
বাস ছেড়ে দিল।